Photo of Ad1

গুঁড়ো দুধ আর গরুর দুধের মধ্যে পার্থক্য কতটুকু?

১৮০২ সালে মঙ্গোলীয় তাতার বাহিনী যুদ্ধে যাবার সময় সাথে খাদ্য হিসেবে দুধ বহনের এক অভিনব উপায় আবিষ্কার করে। তারা দীর্ঘক্ষণ সূর্যের আলোয় রেখে দুধ শুকিয়ে একে এক প্রকার পেস্টে পরিণত করে। এতে করে তারা বিপুল পরিমাণ দুধ বহন করতে সক্ষম হয়, পাশাপাশি সেটি দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করাও সম্ভব হয়। আর সেই ঘটনা থেকেই জন্ম হয় পাউডার দুধ তথা গুঁড়ো দুধের। মঙ্গোল বাহিনীর আবিষ্কৃত সেই প্রক্রিয়া নানানভাবে পরিবর্তিত হয়ে এখন আধুনিকরূপে পুরো বিশ্বজুড়েই অনুসরণ করা হয়।যেকোনো যুদ্ধে, দুর্যোগে কিংবা মহামারিতে ত্রাণ বিতরণে এখন গুঁড়ো দুধের ব্যবহার বিশ্বজনীন। কারণ এটি সহজে নষ্ট হয় না, পানিতে মেশালেই তরল দুধের সাথে বিশেষ কোনো পার্থক্য থাকে না, আর পরিবহনও অত্যন্ত সহজ।
গুঁড়ো দুধ আর তরল দুধের পার্থক্য মূলত একটাই, আর্দ্রতা।
তরল দুধ থেকে সবটুকু পানি শুকিয়ে এবং আর্দ্রতা সম্পূর্ণ শুষে নিলেই তা গুঁড়ো দুধ হিসেবে বাজারে সহজলভ্য পাউডারে পরিণত হয়।
আপনি যে দুধ খাচ্ছেন তা আসল না নকল তা বুঝার ভিবিন্ন উপায় আছে । তবে এমন কিছু উপায় আছে মাধ্যমে ঘরোয়া ভাবেই আপনি দুধে ভেজাল আছে কীনা সেটা চিহ্নিত করতে পারবেন। দেখে নিন সে সব ঘরোয়া উপায়। মাটিতে সাদা দাগ একটু দুধ মাটিতে ঢালুন। যদি দেখেন গড়িয়ে গিয়ে মাটিতে সাদা দাগ রেখে যাচ্ছে, তা হলে এ দুধ খাঁটি। ভেজাল হলে মাটিতে সাদা দাগ পড়বে না। হলদেটে দুধ গরম করতে গেলেই কি হলদেটে হয়ে যাচ্ছে? তা হলে এ দুধ খাঁটি নয়। এতে মেশানো হয়েছে কার্বোহাইড্রেট। লবণ বাড়িতেই করে ফেলুন স্টার্চ টেস্ট। একটু দুধ পাত্রে নিয়ে তাতে ২ চা চামচ লবণ মেশান। যদি লবণের সংস্পর্শে এসে দুধ নীলচে হয়, তা হলে বুঝবেন, এ দুধে কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। ফরমালিন দুধে ফরমালিন রয়েছে কীনা তা বুঝতে এর মধ্যে একটু সালফিউরিক এসিড মেশান। যদি নীল রং হয়, তবে ফরমালিন আছে। ইউরিয়া এক চামচ দুধে সয়াবিন পাউডার মেশান। কিছুক্ষণ রেখে এতে লিটমাস পেপার রাখুন। যদি লিটমাস ডোবাতেই লাল লিটমাস নীল হয় তবে বুঝবেন ইউরিয়া রয়েছে সেই দুধে। ফেনা দুধের সমান পানি মেশান একটি শিশিতে। এবার শিশির মুখ বন্ধ করে জোরে ঝাঁকান। অস্বাভাবিক ফেনা হলেই বুঝবেন, দুধে মেশানো আছে ডিটারজেন্ট।
ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, প্রোটিন, কয়েকটি ভিটামিনসহ বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করে তরল খাবার দুধ। কিন্তু বাজারে দুধের নামে যা বিক্রি হচ্ছে, তা ধীরে ধীরে মানুষকে স্বাস্থ মৃত্যুঝুঁকিতে ঠেলে দিচ্ছে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পত্রিকার ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘দেশে পুষ্টির অন্যতম প্রধান জোগান হিসেবে বিবেচিত গরুর দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্যে এবার মিলেছে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নানা উপাদান। ১০ ফেব্রুয়ারি এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে সরকারের জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের প্রতিবেদনে। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সভাকক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ অন্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে।’ জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গরুর খোলা দুধে অণুজীবের সহনীয় মাত্রা সর্বোচ্চ ৪ থাকার কথা থাকলেও পাওয়া গেছে ৭.৬৬ পর্যন্ত।’ এরপর সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী মামুন মাহবুব। পরে আদালত দুধে সিসা মিশ্রণকারীদের শাস্তির আওতায় আনার ব্যর্থতা কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন আদালত। এছাড়া, রুলে দুগ্ধজাত খাবারে ভেজাল প্রতিরোধে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি খাদ্যে ভেজালের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির (মৃত্যুদণ্ড) কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। একইসঙ্গে আদালত ঢাকাসহ সারাদেশের বাজারে কোন কোন কোম্পানির দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য পণ্যে কী পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক এবং সিসা মেশানো রয়েছে, তা নিরূপণ করে একটি জরিপ প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ দেন। জাতীয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন
Photo of Ad1