Photo of Ad1

যারা কোমায় আক্রান্ত তারা কি খাওয়া দাওয়া করে? ওয়াশরুম করে? তাদের কি দৈহিক বৃদ্ধি চলতে থাকে?

 

কোমা হলো এমন একটি অবস্থা, যেখান থেকে মানুষ জেগে উঠতে পারে না বা তার চেতনা কাজ করে না। যখন কেউ পরিবেশের কোনো উদ্দীপনায় (যেমন শব্দ, আলো, ব্যথা ইত্যাদিতে) সাড়া দেয় না এবং তার ঘুম-জাগরণের কোনো চক্র আর অবশিষ্ট থাকে না, তখন সে কোমায় আছে বলে ধরা যায়। মস্তিষ্কের চূড়ান্ত পর্যায়ের ব্যর্থতা বা ফেইলিওরের উদাহরণ হলো এই কোমা।


সাধারণত কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কোমার একটি পরিসমাপ্তি ঘটে। হয় রোগী আবার জেগে ওঠে বা সচেতন হয়, নয়তো মৃত্যুবরণ করে। কিন্তু বিরল ক্ষেত্রে কেউ কেউ মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কোমায় থাকতে পারে।


কোমার কাছাকাছি দুটি শব্দ হলো ‘ব্রেইন ডেথ’ আর ‘ভেজিটেটিভ স্টেট’। ব্রেইন ডেথ অর্থ, মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি বা মস্তিষ্কের সব কার্যক্রম থেমে যাওয়া। আর ভেজিটেটিভ স্টেট অর্থ, রোগীর মস্তিষ্ক সজাগ থাকে, কিন্তু চেতনা দিয়ে বা স্বেচ্ছায় কিছু করতে পারে না।


নানা ধরনের রোগ ও শারীরিক সমস্যার কারণে মানুষ কোমায় চলে যেতে পারে। যেমন: স্ট্রোক, মস্তিষ্কের টিউমার, মস্তিষ্কে হেমারেজ বা রক্তক্ষরণ, মস্তিষ্কে সংক্রমণ, এবসেস, থ্রম্বোসিস (রক্তনালি বা হৃদ্‌যন্ত্রে জমাট রক্ত) ইত্যাদি। আবার মস্তিষ্কের বাইরের কোনো সমস্যার কারণেও হতে পারে এটি। যেমন কোনো কারণে যদি মস্তিষ্কে হাইপোক্সিয়া বা অক্সিজেন সরবরাহের ঘাটতি থাকে (যেমন হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে), কিছু ওষুধ বা বিষের প্রতিক্রিয়ায়, শরীরে ইলেকট্রোলাইট বা খনিজ লবণের ভারসাম্যহীনতায় বা শরীরের তাপমাত্রা ও রক্তে শর্করা খুব বেশি বা কমে গেলে।


কারো চেতনা আছে তখনই বলা যাবে, যখন তার দুটি বৈশিষ্ট্য ঠিকঠাক থাকবে। তাকে হতে হবে awake বা সজাগ এবং aware বা সচেতন। সজাগ বলতে বোঝানো হচ্ছে কোনো মানুষের যদি স্বেচ্ছায় দেহকে সঞ্চালন করতে পারা, হাত নাড়ানো বা চোখের পাঁপড়ি নাড়ানো। আর সচেতন বলতে বোঝায়, আশেপাশের ঘটনার প্রতি প্রতিক্রিয়া থাকতে হবে। অর্থাৎ কেউ আঘাত করলে ব্যথা পেতে হবে, বা কেউ ডাকলে সাড়া দেবার ক্ষমতা থাকতে হবে। কারো কোনো চেতনার ব্যাধি হলে, এ দু’টো অন্তত যেকোনো একটিতে ঘাটতি দেখা যায়। কোমার ক্ষেত্রে দু’টো বৈশিষ্ট্যের একটিও থাকে না।


তবে একজন কোমায় থাকা রোগীর মস্তিষ্ক যে চলছে, তা বোঝা যায় রোগীর কিছু অটোমেটিক ব্যাসিক রেস্পন্স থেকে, যেমন তাদের চোখের পিউপিল ডাইলেটেড অবস্থায় থাকে। কিন্তু এই চলাটা সাধারণের তুলনায় নিতান্তই নগণ্য। মস্তিষ্ক কোমায় থাকা অবস্থায় অনেক কম শক্তি ব্যবহার করে, আপনার সবচেয়ে গভীর ঘুম থেকেও ১০-২০% কম শক্তি, আর জাগ্রত অবস্থার তুলনায় ৫০-৬০% কম। এই কম শক্তির ব্যবহার থেকেই বোঝা যায়, সারা মস্তিষ্কের কার্যক্রম তখন কতটা শিথিল রয়েছে। এই শিথিল থাকার কারণে, মস্তিষ্কে তখন আর রেগুলার স্লিপ সাইকেল থাকে না।


কোমায় থাকা ব্যক্তিরা খাওয়া দাওয়া করে?


রোগীর শিরায় সুচের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করা হয়,কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি রোগীর পাকস্থলীতে নল প্রবেশ করানোর মাধ্যমে পানি সহ অন্যান্য খাবার সরবরাহ করা হয়।


কোমায় থাকা ব্যক্তিরা কি প্রসাব পায়খানা করে?


হ্যাঁ, কোমা রোগীর অন্ত্রের গতিবিধি রয়েছে।যেহেতু কোমায় আক্রান্ত রোগীরা নিজেরাই প্রস্রাব করতে পারে না, তাদের প্রস্রাব অপসারণের জন্য সরাসরি তাদের মূত্রাশয়ের মধ্যে ক্যাথেটার নামক একটি রাবার টিউব থাকে যা দিয়ে সরাসরি মূত্র অপসারন করানো হয়।কোমা রোগী রা যেহেতু কোনো কিছুই নিজ থেকে করতে পারে না তাই তাদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য আলাদা নার্স রাখা হয়।এবং তাদের মল ত্যাগ স্বাভাবিক পরিমান এর তুলনায় কম হয়।আর সব সময় তাদের এডাল ডায়পার পরিয়ে রাখা হয়।


কোমায় থাকা ব্যক্তিদের কি শারীরিক বৃদ্ধি ঘটে?


যেহেতু কোমায় থাকা লোকের শ্বাস প্রশ্বাস চলে,এবং তাদের খাবারেরও প্রয়োজন হয় যা তাদের দেহটি যথারীতি হজম করে। তাই কোমায় থাকা ব্যক্তিদের চুলসহ নানা অঙ্গের বৃদ্ধি বা পরিবর্তন ঘটে থাকে এবং পেশীগুলি ও উদ্দীপনার প্রতি প্রতিক্রিয়া জানায়।


তবে কোমা আক্রান্ত রোগীর সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো,বেডসোর।দীর্ঘদিন একইভাবে নিথর হয়ে হাসপাতালের বিছানায় পড়ে থাকতে থাকতে শরীরে দেখা দেয় এই রোগ।অচেতন অবস্থাতেও তাই দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখার রাখার জন্য নিয়মিত ফিজিওথেরাপিস্ট দিয়ে মালিশ করানো উচিত।কোমায় যাওয়া ব্যক্তির কোমা থেকে ফিরতে কয়েক সপ্তাহ,মাস এমনকি বছরও লেগে যেতে পারে। সবাই তো ফেরেও না,ওভাবেই একদিন ঢলে পড়ে মৃত্যুর কোলে।


সিনেমায় কোমা হতে ফিরে আসা ব্যক্তিকে মুহূর্তের ভেতর সুস্থ হতে দেখা যায়। প্রকৃতপক্ষে কোমা থেকে ফিরে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে যাবার প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ,ধীর। কোমা থেকে ফিরে আসার পরেও দীর্ঘদিন একজন ব্যক্তিকে শারীরিক আর মানসিক থেরাপির ভিতর দিয়ে যেতে হয়।সারাহ’র কেসটি থেকে জানা গেছে,কীভাবে কোমার কারণে অনেকে তাদের জীবনের কয়েক বছরের স্মৃতিও হারিয়ে ফেলেন।কোমা থেকে জাগানোর কোন ওষুধ আজও চিকিৎসকদের হাতের মুঠোয় আসেনি।পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এ নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা।ততদিন কোমায় ভুগতে থাকা হতভাগ্য মানুষ আর তাদের স্বজনদের জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় কী!


ধন্যবাদ😊।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন
Photo of Ad1