Photo of Ad1

হাবল স্পেস টেলিস্কোপ: যাকে বলা হয় মহাকাশে বিজ্ঞানীদের লাগানো চোখ।



মহাকাশ গবেষণা নিয়ে যাঁরা একটু-আধটু খোঁজ রাখেন, তাঁদের কাছে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ নামটি খুবই পরিচিত। শক্তিশালী এই দূরবীক্ষণযন্ত্র মহাকাশে অবস্থানের ২৫ বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে চলতি মাসেই। আর ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি না, তা আরও নিবিড়ভাবে অনুসন্ধানের লক্ষ্যে ওই টেলিস্কোপের উত্তরসূরি হিসেবে আরেকটি যন্ত্র তৈরি করা হচ্ছে।

মার্কিন মহাকাশ সংস্থা (নাসা) এবং ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার (ইএসএ) যৌথ উদ্যোগে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ১৯৯০ সালের ২৪ এপ্রিল যাত্রা শুরু করে। তার পর থেকে এটি একের পর এক অভূতপূর্ব ছবি তোলার মাধ্যমে মহাবিশ্ব সম্পর্কে জ্যোতির্বিদদের ধ্যানধারণা পাল্টে দিতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরে অবস্থিত স্পেস টেলিস্কোপ সায়েন্স ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী মারিও লিভিও বলেন, ‘হাবল স্পেস টেলিস্কোপ সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন আবিষ্কারের উত্তেজনায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছে। হাবল টেলিস্কোপের তোলা ছবিগুলো আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। আমি ব্যাপারটাকে অবিশ্বাস্য অবদান বলে স্বীকার করি।’

হাবল স্পেস টেলিস্কোপ আরও অন্তত পাঁচ বছর ধরে মহাশূন্যে অনুসন্ধান চালানোর সামর্থ্য রাখে। তবু ভবিষ্যতের জন্য আরও উন্নততর একটি মহাকাশ দূরবীক্ষণযন্ত্র চালুর পরিকল্পনা শুরু করার এখনই সময়। লিভিও বলেন, নতুন ওই স্পেস টেলিস্কোপটিকে মহাকাশবিজ্ঞানের পরবর্তী বড় বাধাগুলো অতিক্রম করার উপযোগী হতে হবে।

নেচার সাময়িকীতে গত বুধবার প্রকাশিত এক মন্তব্য প্রতিবেদনে লিভিও লিখেছেন, ‘হাবল টেলিস্কোপই আমাদের শিখিয়েছে যে জ্যোতির্বস্তুবিদ্যার সবচেয়ে কৌতূহলোদ্দীপক প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই বড় পরিসরে চিন্তা করতে হবে এবং বাজেট নিয়ে উদ্বেগের চেয়ে বৈজ্ঞানিক উচ্চাভিলাষকেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আমি মনে করি, পরবর্তী পর্যায়ে আমাদের সৌরজগতের বাইরে প্রাণের উপস্থিতি অনুসন্ধানের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। একটি শক্তিশালী স্পেস টেলিস্কোপ চালু করতে হবে, যা সৌরজগতের বাইরে পৃথিবীসদৃশ গ্রহগুলোতে প্রাণের চিহ্ন খুঁজে বেড়াবে। আর তাহলেই সেটি হাবল স্পেস টেলিস্কোপের সুযোগ্য উত্তরসূরি হতে পারবে।’

হাবল স্পেস টেলিস্কোপের উত্তরসূরি হিসেবে নাসা ৮৮০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে ২০১৮ সালে চালু করতে যাচ্ছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। এটি অবলোহিত রশ্মির অনুকূলে কাজ করতে পারবে এবং ট্রানজিস্টিং এক্সোপ্ল্যানেট সার্ভে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আবিষ্কৃত কয়েকটি গ্রহের আবহমণ্ডল নিয়ে গবেষণা চালাবে। লিভিও মনে করেন, ‘নতুন স্পেস টেলিস্কোপটির প্রাথমিক মিররটি অন্তত ৩৯ ফুট প্রশস্ত হওয়া উচিত। আর সেটির দৃষ্টিশক্তির তীক্ষ্ণতা হতে হবে হাবল স্পেস টেলিস্কোপের তুলনায় অন্তত ২৫ গুণ বেশি। কিন্তু জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মূল মিররটির প্রস্থ হবে ২১ দশমিক ৩ ফুট। তবে এটি হবে অত্যন্ত শক্তিশালী এবং আমাদের সৌরজগতের বাইরে পৃথিবীসদৃশ গ্রহগুলোর আকাশ নিরীক্ষা করার জন্য যথেষ্ট।’

জ্যোতির্বিদ্যা নিয়ে গবেষণাকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংগঠন (এইউআরএ) আগামী জুনে ওই স্পেস টেলিস্কোপের সম্ভাব্য সামর্থ্য কী হওয়া উচিত, সে ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। এটি মহাকাশে ওই নতুন অভিযানকে সফল করার উদ্যোগ নিতে সহায়ক হবে বলে মনে করেন লিভিও। তিনি লিখেছেন, নাসা, ইএসএ এবং গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদারকে ওই প্রকল্প নিয়ে সম্মিলিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে হবে। তিনি ভবিষ্যৎ স্পেস টেলিস্কোপের জন্য নির্দিষ্ট কোনো নকশা অনুসরণের কথা বলছেন না; বরং বড় চিন্তা করার জন্য সহকর্মীদের উৎসাহিত করছেন; যাতে করে মহাবিশ্ব সম্পর্কে মানবজাতির ধারণা আরও সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে সম্ভাব্য অভিযানটি সফল হয়।

আমাদের সৌরজগতের বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি না, তা এখন বিজ্ঞানের সবচেয়ে কৌতূহল-জাগানিয়া প্রশ্নগুলোর একটি। আর সেই প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানার চেষ্টা করাটাই হবে নতুন স্পেস টেলিস্কোপের লক্ষ্য। অদূর ভবিষ্যতে প্রশ্নটির জবাব পাওয়া গেলে বিজ্ঞানের জন্য সেটা হবে নিঃসন্দেহে অনেক বড় এক অর্জন।

সূত্র: ডিসকভারি নিউজ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন
Photo of Ad1