Photo of Ad1

পাখিরা ‘ভি’ আকারে ওড়ে কেন?

দ্বাদশ শতাব্দীর দিকে দক্ষিন পশ্চিম ইউরোপের ছোট্ট একটা গ্রামে খুবই চুপচাপ এবং আত্নকেন্দ্রিক একটা ছেলে বাস করত । রোজ বিকেলে তার সমবয়সিরা যখন মাঠে খেলতে যেত তখন সেও তাদের অনুসরন করতো কিন্তু কখনই তাদের সাথে খেলায় যোগ দিত না । সে মাঠের কোন এক কোণে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে কি যেন চিন্তা করতো । একরকম বন্ধুবান্ধবহীন ছেলেটার অদ্ভুত এ আচরণে তার সমবয়সী ছেলেমেয়েরা অনেকটা অভ্যস্তই ছিলো । অন্যদের মধ্যে তাকে নিয়ে খুব একটা আগ্রহ না খাকলেও তার এই আচরন নিয়ে সুযোগ পেলেই অনেকে মজা করতো । এমনি কোন এক বিকেলে ছেলেটা একা একা বসে নিবিড় মনোযোগে আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে । হঠাৎ কী যেন দেখলো সে । দৌড়ে গেল তার সমবয়সীদের কাছে । চিৎকার করে সবাইকে জিজ্ঞেস করলো ’আমাকে খেলায় নিবে?” তার সমবয়সী ছেলেরা যথারীতি অবাক তার কান্ড দেখে । অনেকেরতো বিস্ময়ের সীমা ছিলো না কারন যে ছেলেকে তারা কখনও জোর করেও খেলার আনতে পারে নি সে আজ নিজে থেকে তাদের সাথে খেলতে চাইছে ! তারা আগ্রহ নিয়ে ছেলেটার কাছে জানতে চাইলো কী এমন হয়েছে যার জন্য তার এতো উচ্ছ্বাস ! ছেলেটা শুধু বললো তার কাজ শেষ, এখন থেকে সে নিয়মিত তাদের সাথে খেলতে আসবে । ছেলেটার নাম ছিলো লিওনার্দো বোনাচি ওরফে ফিবোনাচি । যে পরবর্তীতে একজন বিখ্যাত ম্যাথামেটিশিয়ান হিসেবে পৃথিবীতে পরিচিতি পায় । আর সেদিন সে যা দেখেছিলো তা দেখতে অনেকটা এরকম ছিলো -

ছবি: জাহিদ শিফাত (ফ্লিকার)

ছোট ছেলে ফিবোনাচি অনেকদিন যাবৎ আকাশে পাখি উড়ার ধরন পর্যবেক্ষন করে আবিস্কার করলেন পাখি যখন একসাথে হয়ে উড়ে এবং দূরের পথ অতিক্রম করতে চায় তখন তারা - ১ ১ ২ ৩ ৫ ৮ ১৩ ২১ ৩৪ .. এই নীতি অনুসরন করে । এখন প্রশ্ন হলো তাদের এইভাবে উড়ার দরকারই বা কি ! উদাহরনস্বরুপ বলা যায় প্রতিবছর শীতে সাইবেরিয়া থেকে লাখ লাখ পাখি বাংলাদেশে আসে । যাদের আমরা অতিথি পাখি বলে জানি । এইসব অতিথি পাখি বাংলাদেশে আসতে প্রায় সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার অতিক্রম করে । একটা পাখির পক্ষে একা তারা যে পদ্বতিতে উড়ে তাতে একটানা সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার অতিক্রম করা অনেক কষ্টসাধ্য হয়তো সম্ভবই না । কারন পাখিকে প্রচন্ড বাতাসের চাপঁ অতিক্রম করে উড়তে হয় এবং সামনের দিকে এগোতে হয়। উপরে দেয়া ছবিটাতে একেবারে ডানে যে পাখিটাকে দেখছেন সে মূলত এই ঝাকটার ড্রাইভিং সীটে রয়েছে । এতোগুলো পাখির মধ্যে সে সবচেয়ে বেশী শক্তি ব্যয় করে অর্থাৎ বাতাসের চাপ কাটিয়ে সামনে এগোচ্ছে । এর পরে যে আছে সে অপেক্ষাকৃত একটু কম শক্তি ব্যয় করছে তার সামনের জনের থেকে । এর পরে যে দুইটি পাখি আছে তারা তার আগের জনের চেয়ে আরেকটু কম শক্তি ব্যয় করছে । প্রতিটিা রো এর ক্ষেত্রে একই নিয়ম প্রযোজ্য । নির্দিষ্ট একটা রো এর পাখিরা তার আগের রো এর চেয়ে কম শক্তি ব্যয় করে উড়ে এবং তার পরের রো এর চেয়ে বেশি শক্তি ব্যয় করে । এর ফলে উড়বার ক্ষেত্রে পাখিদের সবসময় সর্বোচ্চ শক্তি ব্যয় করতে হয় না । একেবারে শেষের যে রো টাকে দেখছেন তারা মূলত পেসেনজার সীটে রয়েছে এবং তারা অনেকটা বিশ্রামরত অবস্থায় । কিছুক্ষন পর পর তারা ক্রমান্বয়ে তাদের অবস্থানের পরিবর্তন করবে । এইভাবেই চলে পাখিদের হাজার হাজার মাইলের অবশ্বাস্য যাত্রা । সুন্দর এই প্রশ্নটার জন্য প্রশ্নকর্তাকে ধন্যবাদ ।

EDIT-1: পাখিরা ভি ফরমেশন ছাড়াও আরো অনেক যেমন লাইন ফরমেশন, জে ফরমেশন এবং ক্লাসটার ফরমেশন অনুসরন করে । অবার প্রতিটা ফরমেশনের মধ্যে পাখিদের অভ্যন্তরিন এরেন্জমেন্ট বিভিন্নরকম হতে পারে । ফিবোনাচি সিকোয়েন্স এমন কিছু এরেন্জমেন্টের মধ্যে একটা । সুতরাং এইটা ভাবার কোন অবকাশ নেই যে পাখিরা শুধু ফিবোনাচি সিরিজই ফলো করে উড়ে । আমার উত্তরের মূল উদ্দেশ্য ছিলো পাখিদের উড়ার ধরনের একটা কারন ব্যাখ্যা করা ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন
Photo of Ad1