Photo of Ad1

সূর্যের অাসল রং কী?

ভোরে ঘুম থেকে ওঠার পর আমরা দেখি সূর্য থাকে হলুদ রঙের। ধীরে ধীরে বেলা বাড়তে থাকলে সূর্যের রঙ হয়ে উঠে কমলা। আর দিনের শেষভাগে সূর্য হয়ে উঠে টকটকা লাল। সূর্যের এ রঙ পরিবর্তন নিয়ে আমরা কি কখনও ভেবেছি, কেন এমনটা হয়? সূর্য আসলে কোন রঙের- লাল, হলুদ নাকি কমলা, নাকি অন্য কোনো রঙের! আমরা জানি সূর্য একটা নক্ষত্র, আর সব নক্ষত্রেরই কোনো না কোনো রঙ আছে। রঙগুলো হলো রেড জায়ান্ট, রেড ডোয়ার্ফ, ব্লু জায়ান্ট, সুপার জায়ান্ট ইত্যাদি। সূর্যের রং নিয়ে গবেষণানির্ভর বিভিন্ন ওয়েবসাইটে একইরকমের উত্তর থাকলেও একটি সহজ ও সুন্দর ব্যাখ্যাসহ জবাব মেলে নাসার ওয়েবসাইটে। ২০১৭ সালের ২১শে আগস্টে হওয়া সূর্যগ্রহণ নিয়ে নাসার ওয়েবসাইটে একটি আলাদা অংশ তৈরি করা হয়। সেখানে নাসার বিজ্ঞানী লু মেয়ো সূর্যের প্রকৃত রং কী তা নিয়ে একটি বিশদ ব্যাখ্যাসহ একটি লেখা প্রকাশ করেন। তবে সূর্যের রং নিয়ে আলোচনার আগে আমাদের জানতে হবে আমাদের দৃষ্টিশক্তি কীভাবে কাজ করে। একটি বস্তুর উপর আলো প্রতিফলিত হয়ে সেই আলো আমাদের চোখে আসলেই সেই জিনিসটি আমাদের চোখে দৃশ্যমান হয়। সূর্য বা আলোর যেকোন উৎসের বেলায় এই প্রতিফলনের ব্যাপারটি আসে না। কারণ, তখন আলো সেই বস্তু থেকেই সরাসরি আমাদের চোখে এসে পড়ে। আলোর যেকোন উৎসের রং নির্ভর করে সেটি থেকে নিঃসৃত আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের উপর। সূর্য থেকে বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো একইসাথে নিঃসৃত হয়। এর ভেতর রয়েছে সবুজ, নীল এবং লাল। এখানে বলে রাখা ভালো, আলো এবং অন্ধকারে (বা কম আলোতে) আমাদের দৃষ্টিশক্তি নির্ভর করে চোখে থাকা দুই প্রকারের কোষের উপর। যার একটি কোন (cone) এবং আরেকটি রড (rod)। “কোন” কোষগুলি রং নির্ণয় করতে সক্ষম। অন্যদিকে রড কোনোপ্রকার রং নির্ণয় করতে পারে না। তাই কম আলোতে আমরা রং দেখতে পাইনা। তখন সবকিছুই ধূসর মনে হয়। নিউটনের প্রিজম পরিক্ষা থেকে আমরা জানি আলোক কণা দৃশ্যমান সাতটি রঙের সমষ্টি, অর্থাৎ সূর্য থেকে এই সাতটি বর্ণের আলো একইসাথে বের হওয়ায় সূর্যের রং আমাদের চোখে হয়ে যায় সাদা। অর্থাৎ একইসাথে সবগুলি রঙের আলোর উপস্থিতিই সাদা আলোর জন্ম দেয়।সে অনুযায়ী সূর্যের প্রকৃত রং সাদা-ই হবে।প্রতিটা নক্ষত্রের রঙ কী হবে তা সেই নক্ষত্রের তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে।একটি নক্ষত্রের তাপমাত্রা যদি হয় সাড়ে পঁয়ত্রিশ হাজার কেলভিনের নিচে তবে তার রঙ হবে লাল। কারণ তখন আমাদের দৃশ্যমান আলোর বর্ণালির মধ্যে লাল রঙের ফোটন অন্যান্য রঙের চাইতে বেশি হারে নির্গত হয়। আবার কোনো নক্ষত্রের তাপমাত্রা যদি দশ হাজার কেলভিনের বেশি হয় তবে তা হবে নীল রঙের। কারণ আগের মতোই, এবার শুধু নীল রঙের ফোটন বেশি নির্গত হয়। আমাদের সূর্যের তাপমাত্রা প্রায় ছয় হাজার কেলভিনের মতো। এ তাপমাত্রার নক্ষত্রগুলো সাধারণত হয়ে থাকে সাদা রঙের। সেক্ষেত্রে সূর্যের আসল রঙ হলো সাদা। হ্যাঁ, সূর্য আসলে সাদা রঙের। কারণ খুব সহজ। এ তাপমাত্রায় সব রঙের ফোটন একই সময়ে নির্গত হয়। আর সব রঙের সমষ্টিই তো সাদা রঙ। সূর্যের প্রকৃত রং দেখতে যেতে হবে মহাশূন্যে। কারণ সেখানে বায়ুমণ্ডল নেই। মহাশূন্য থেকে সূর্যের তোলা বিভিন্ন ছবিতে সূর্যকে সাদা বলেই দেখা গিয়েছে। এখন প্রশ্ন আসে, সূর্যাস্তের সময় সূর্যকে হলুদ দেখায় কেনো? এর পেছনে দায়ী করা যায় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে।যেমন রংধনুর জন্য দায়ী মেঘমালা এবং পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল।স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের “সোলার সেন্টার” এর একটি সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছে। কোন এলাকায় সূর্যাস্তের সময় সূর্য সেই এলাকার পশ্চিমে একেবারে দিগন্তরেখায় থাকে। এসময় সূর্যের আলোকে বায়ুমণ্ডলের অনেক বেশি জায়গা পার করতে হয়। ফলে কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিভিন্ন বর্ণের আলো (যেমন: সবুজ, নীল, বেগুনী) বায়ুমণ্ডলজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পরে,ফলে বায়ুমণ্ডলে সূর্যরশ্মির বিচ্ছুরণ ঘটে থাকে। তারপর অপসারিত হয়ে যায় ছোট ছোট তরঙ্গদৈর্ঘের নীল ও বেগুনি আলোকরশ্মিতে। সূর্য থেকে আসা আলোক বর্ণালির এ দুটো রঙ সরিয়ে নিলে তা অনেকটা হলুদের মতো হয়ে যায়।ফলশ্রুতিতে তখন সূর্যকে আমরা হলুদ আলোয় দেখি। আবার প্রশ্ন হলো সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় সূর্যকে লাল বা কমলা আলোতে দেখায় কেন?উত্তর হচ্ছে অন্যান্য আলোতেও এই একই প্রক্রিয়া ঘটে। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় ভাসমান ধূলিকণা ও বাতাসের অন্যান্য উপাদান সূর্যরশ্মির নীল প্রান্তের কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বর্ণকে বেশি বিক্ষিপ্ত করে ও লাল প্রান্তের বেশি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বর্ণকে কম বিক্ষিপ্ত করে। ফলে সূর্যকে লাল,কমলা,ম্যাজেন্টা রঙেও দেখা যায়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন
Photo of Ad1