বিখ্যাত জাহাজ টাইটানিক সম্পর্কে অনেকেই তো অনেক কিছুই শুনেছেন, কিন্তু এখন আমি কিছু তথ্য জানাচ্ছি, যা খুব কম লোকই জানেন-
টাইটানিক নামক বিশালরুপী সুদর্শন জাহাজটি হিমশৈলে ধাক্কা মারার প্রায় ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের মধ্যেই পুরোটি জলের তলায় ডুবে যায়। প্রায় ১৫০০ জন মানুষ নিহত হন। কিন্তু ৮৮২ ফুট লম্বা একটি বিশাল রুপী জাহাজ মাত্র ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের মধ্যে ধাক্কা লেগেই ডুবে যাওয়া অসম্ভব। একটি ডকুমেন্টারিতে টাইটানিক দ্রুত ডুবে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে যেগুলি বলা হয়েছে, সেগুলি হল-
- টাইটানিক জাহাজের যাত্রীরা ১২ টি ছোট ছোট জানালা খোলা রেখেছিল। যখন যাত্রীদের লাইফ বোটে যাওয়ার কথা বলা হয়, যাত্রীরা জানালাগুলি বন্ধ না করেই চলে যান। যার ফলে জল দ্রুত অভ্যন্তরভাগেও প্রবেশ করে।
- টাইটানিকের প্রথম ভাগ অনেক বড় ছিল। এটি এত বড় ছিল যে, প্রায় ৩০ লক্ষ টন এর ওজন ছিল। এত বিশাল ওজনের এই অংশটির প্রতিটি অংশ যোগ করার সময় প্রয়োজন ছিল হাইড্রোলিক শক্তির, যা সম্ভব ছিল না। তাই ম্যানুয়ালি কিল এর মাধ্যমেই এই অংশের ভাগগুলি একসাথে লাগানো হয়। যার কারণে, গঠন কাঠামোতে কিছু খামতি ছিল। যার কারণে একধাক্কাতেই এই অংশটি ভেঙ্গে যায়, এবং জাহাজের অন্য অংশেও জল ঢুকতে থাকে।
- এখানে আরেকটি কথা জানিয়ে রাখি যে, টাইটানিক যখন ডুবছিল, তখন তার আশেপাশেই SS Californian নামের একটি জাহাজ ছিল। এবার বিস্তারিত জানাই। Californian জাহাজটির রেডিও সিগন্যালে একটি জাহাজ আসে, এবং তারা জানতে পাড়েন যে, টাইটানিক নামক একটি প্যাসেঞ্জার জাহাজ এই সিগন্যাল পাঠিয়েছে। এই Californian জাহাজটি টাইটানিককে সতর্কিত করে যে, সেই জায়গাটিতে অনেক বরফের চাই রয়েছে। কিন্তু টাইটানিক এ ব্যাপারে বিশেষ তেমন মাথা ঘামায় নি।
NEAREST SHIPS OF TITANIC টাইটানিকের নিকটবর্তী জাহাজ IMAGE SOURCE
যেহেতু অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল, এবং বিপুল পরিমাণ বরফের চাই থেকে বিপদ ঠেকাতে Californian নিজেই থেমে গিয়েছিল, এবং এই জাহাজটির রেডিও অপারেটরকে ঘুমিয়ে পড়ার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রাত প্রায় ১১.৫০ তখন জাহাজের অফিসার টাইটানিক থেকে আলোর ছটা দেখতে পান। এবং এর লাইট গুলি কখনো জ্বলছিল আবার কখনো নিভছিল। যদিও টাইটানিক প্রায় ১১.৪০ য়েই ধাক্কা লেগে গিয়েছিল। এই ধরনের অস্বাভাবিক এবং অস্বচ্ছ ঘটনার পরেও Californian জাহাজের কোনো সদস্যই রেডিও অপারেটরকে ডেকে তোলেননি। এর পরিবর্তে জাহাজটি কিছু আলোর সিগন্যাল ছাড়ে।
যদিও এই Californian জাহাজটি থেকে টাইটানিককে খুব ভালোভাবেই দেখা যাচ্ছিল, কিন্তু তারা টাইটানিক যে, ডুবছিল সেদিকে ঠিকমত খেয়াল করেননি। এরপর ভোর ১.৫০ নাগাদ আরও কিছু সিগন্যাল ছাড়া হয়। ২.১৫ নাগাদ Californian আর টাইটানিককে দেখতে পায় নি। তারা ধরে নেয়, টাইটানিক চলে গেছে। এরপর ভোর ৫.৩০ নাগাদ রেডিও অপারেটর ঘুম থেকে উঠার পর, তার কাজ সামলাতে চলে যান, এবং জানতে পাড়েন যে, টাইটানিক জলের তলায় তলিয়ে গেছে। পরবর্তীতে জানা যায় যে, এই Californian জাহাজটি চাইলেই টাইটানিকের অনেক যাত্রীর প্রাণ বাঁচাতে পাড়তেন, এমনকি সিগন্যাল দিয়ে আশেপাশের জাহাজ গুলিকেও SoS সংকেত দিয়ে ডাকতে পারত, কিন্তু এই জাহাজের Crew member দের অবহেলা এবং অসহযোগিতার ফলাফল ১৫০০ প্রাণ -২ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের জলের তলায় তলিয়ে যায়।
এরপর যতক্ষণে তারা টাইটানিকের কাছে পৌঁছায় ততক্ষণে উদ্ধারকার্য শেষ।