Photo of Ad1

শুক্র গ্রহ উল্টা দিকে ঘুরে কেন?

সূর্যের চারপাশে গ্রহগুলো সাধারণত ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘোরে, নাকি উল্টোদিকে ঘোরে, সেটা নির্ভর করে আপনি সৌরমণ্ডলীয় তলের কোন পাশ থেকে দেখছেন (মানে কল্পনা করছেন) তার উপরে। তবে সাধারণ নিয়ম হলো, পৃথিবীর উত্তর মেরু যেদিকে (মানে উত্তরের ধ্রুবতারা যেদিকে) সেদিকের কোন কাল্পনিক স্থান থেকে দেখছেন বলে কল্পনা করা। সেই হিসেবে পৃথিবীসহ প্রায় সকল গ্রহই (এমনকি সূর্য নিজেও) কিন্তু ঘড়ির কাঁটার উল্টোদিকে ঘুরছে। অর্থাৎ পশ্চিম থেকে পূবের দিকে পাক দিচ্ছে। সেকারণে, এসব যায়গায় আকাশের সব বস্তুগুলোকে পূর্বে উদিত হয়ে পশ্চিমে অস্ত যেতে দেখা যায়।

ছবি - উত্তর মেরু থেকে উপরের দিকে কোন কাল্পনিক স্থান থেকে দেখলে সৌরজগতের গ্রহগুলোকে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে চলতে দেখা যাবে। আর প্রায় সবগুলো গ্রহকে একই দিকে পাক খেতে দেখা যাবে। একে বলে প্রোগ্রেড মোশন। (সংগৃহীত)

অর্থাৎ আপনি যদি উত্তর দিকে পিছন ফিরে দক্ষিণমুখী হয়ে দাঁড়িয়ে আকাশকের দিকে তাকান, তাহলে সবকিছুকে ঘড়ির কাঁটার দিকে অর্থাৎ আপনার বাম পাশ থেকে ডান পাশে ঘুরতে দেখবেন। কারণ পৃথিবীর পৃষ্ঠে দাঁড়িয়ে আমরা নিজেরাই ডান থেকে বামের দিকে ঘুরছি। অর্থাৎ পৃথিবীসহ সৌরজগতের প্রায় সবগুলো গ্রহ-উপগ্রহই ঘড়ির কাঁটার উল্টোদিকে পাক খাচ্ছে।

ব্যাতিক্রম কেবল শুক্র, ইউরেনাস, আর শনির উপগ্রহ টাইটান। আসলে এদের ক্ষেত্রেও আপনি যদি এদের প্রকৃত উত্তর মেরুর দিক থেকে দেখেন, তাহলে এরাও ঘড়ির কাঁটার উল্টোদিকেই ঘুরছে। সেকথা বলছি পরে। তার আগে ভেবে দেখুন পৃথিবীর উত্তরদিকটাই কি আসলে পুরো সৌরজগতের উত্তর দিক?

মোটেই না। সৌরমণ্ডলীয় তলের সাপেক্ষে যেটা উত্তর দিক, পৃথিবীর উত্তর দিকটাও মোটামুটি সেদিকেই, কিন্তু সেটা ২৩.৫ ডিগ্রীর মত হেলানো।

পৃথিবীর মতই মঙ্গলও কিন্তু কাছাকাছি পরিমাণ (২৫ ডিগ্রী) হেলে আছে। সেকারণে, এই দুটি গ্রহে ঋতু পরিবর্তন হয়। শনিও মোটামুটি এতটুকুই (২৬ ডিগ্রী) হেলে আছে। নেপচুনের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ টা হলো ২৮ ডিগ্রী।

এমনকি সূর্য নিজেও হেলে আছে ৭ ডিগ্রীর মত। বুধ আর বৃহস্পতি এক্ষেত্রে সবথেকে সুবোধ গ্রহ। তাদের উত্তর মেরু প্রায় সৌরমণ্ডলীয় তলের সাথে প্রায় উলম্বভাবেই থাকে। অর্থাৎ এদের উত্তর মেরু আর সৌরমণ্ডলের উত্তর মেরু প্রায় একই দিকে।

বাকি রইল কেবল শুক্র আর ইউরেনাস। তবে মাঝে প্লুটোর কথা যদি বলি, তাহলে ওর ক্ষেত্রে এটা ৬০ ডিগ্রী। আবার ওর কক্ষপথটাও এতই বাঁকানো যে, মোটের উপর হিসাবটা বেশ জটিল।

বুঝতেই পারছেন, এই হেলে থাকার বিষয়টি একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম। এখন ভাবুন তো ইউরেনাসের কথা। কারণ এটি প্রায় ৮২ ডিগ্রী হেলে আছে। অর্থাৎ এর উত্তর-দক্ষিন হলো প্রায় সৌরমণ্ডলীয় তল বরাবর। তাই এর আহ্নিক গতির কারণে এখানে দিন-রাত হয় না। বছরে একবার করে দক্ষিণে সূর্য উঠে উত্তরে অস্ত যায়, তারপর উত্তর দিক থেকেই উঠে আবার দক্ষিণে অস্ত যায়। পুরো বছরে মাত্র একবার।

আর শুক্রের ক্ষেত্রে এই হেলে থাকার পরিমাণ (১৭৭ ডিগ্রী) এতই বেশি যে, শুক্রের উত্তর মেরু হেলতে হেলতে চলে গিয়েছে প্রায় দক্ষিণে, আর দক্ষিণ মেরু উত্তরে। তাই এখানে পশ্চিমে সূর্য উঠে পূর্বে অস্ত যায়। অন্যদের সাপেক্ষে মনে হয় যেন, এটি পূর্ব থেকে পশ্চিমে পাক খাচ্ছে। এখন এই যে এতথানি হেলে থাকার বিষয়টাকে আপনি অন্যভাবেও ভাবতে পারেন। আপনি ওর দক্ষিণ মেরুটাকেই উত্তর মেরু মনে করে বলতে পারেন যে, এটি হেলে আছে মাত্র ৩ ডিগ্রী, কিন্তু ঘুরছে উল্টোদিকে (মানে ঘড়ির কাঁটার দিকে)। ঘুরেফিরে সেই এক কথাই হলো।

গ্রহগুলোর এই যে বিভিন্ন মাত্রায় হেলে থাকা, এর কারণেই এদের আহ্নিক ঘূর্ণনের কারণে এতসব বিচিত্র অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আর এই হেলে থাকার পিছনে মূল কারণ হলো দু'টি।

  • সৃষ্টির শুরুর আদি অবস্থা। একেক অঞ্চলের ধুলো আর গ্যাসের মেঘের মাঝে ঘটে চলেছিল একেক রকমের প্রতিযোগিতা। কে কখন কার সাথে মিলেছে, তার তো কোন হিসেব নেই।
  • আর পরবর্তিতে বিভিন্ন ভারী বস্তুর আছড়ে পড়া। আসলে ছোট বড় যা-ই হোক, তাদের সবাই যখন আছড়ে পড়ে, তখন গ্রাহককে তার আদি অবস্থা থেকে কিছু না কিছু বিচ্যুত করে প্রশমিত হয়।

এর বাইরেও যার যার গঠনপ্রকৃতি, প্রতিনিয়ত ঘটে চলা নানাবিধ ঘটনা এবং অন্যান্য বস্তুর প্রভাবেও কিছু বিচ্যুতি যেমন ঘটে, তেমন কিছুটা স্থিতিও পেতে পারে।

মজার বিষয় হলো, এই হেলে থাকার পরিমাণেরও একটা ছন্দিত গতি আছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন
Photo of Ad1