সূর্য আমাদের সব ধরণের শক্তির উৎস, তবে অন্যান্য শক্তির উৎসের মতোই সূর্য অস্থায়ী একটি উৎস। ধ্বংস বলতে যদি বিশাল বিস্ফোরণ শেষে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া বুঝিয়ে থাকেন, তাহলে তেমন কিছু ঘটবে না। নক্ষত্রের জীবনের অবসান এর প্রকৃতি, আকার, ভর ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। সূর্য হচ্ছে মাঝারি আকারের একটা নক্ষত্র এবং এর জীবনাবসানেরও নির্দিষ্ট ধরণ রয়েছে। সেটা নিচে লিখছিঃ
সূর্য তাঁর জীবনের অর্ধেকটা এর মধ্যেই পেরিয়ে এসেছে। এর মূল জ্বালানী হাইড্রোজেনের অর্ধেকটা এর মধ্যেই শেষ করে ফেলেছে এটি! যা হাইড্রোজেন আছে তা দিয়ে আরও প্রায় ৫০০ কোটি বছর চলবে। হাইড্রোজেন ফিউশন প্রক্রিয়ায় হিলিয়াম হয়েই শক্তির উৎপন্ন করে। এই ফিউশন প্রক্রিয়া বাইরের দিকে একটা চাপের সৃষ্টি করে আর সূর্যের অভিকর্ষ নিজের কেন্দ্রের দিকে একটা টান বা বলের সৃষ্টি করে। এই দুইয়ে মিলে একটা স্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি করে। এর কারণেই সূর্য বা অন্যান্য নক্ষত্র গোলাকার ধারণ করে।
যেভাবে নক্ষত্র স্থিতিশীল অবস্থায় থাকে।
তাই যখন ফিউশন শেষ হয়ে যাবে তখন বহির্মুখী চাপের তুলনায় অভিকর্ষের টান বেশি হবে ও সূর্যের আকার সংকুচিত হয়ে আসবে! এ সংকোচনের ফলে তাপমাত্রা বেড়ে যাবে ও হিলিয়াম ফিউশনের মাধ্যমে কার্বন হবার মতো অবস্থায় পৌঁছাবে। নক্ষত্রের ভর অনুযায়ী এই প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে বা হঠাৎ হঠাৎ বিস্ফোরণের মাধ্যমে হতে পারে। যাই হোক, এই ফিউশন প্রক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন শক্তির ফলে সূর্য তখন আবার বড় হতে থাকবে ও এর আসল আকারের থেকে অনেক বড় হয়ে যাবে। নির্দিষ্ট করে বলতে তখন সূর্য বড় হয়ে বুধ, শুক্রকে গ্রাস করে প্রায় পৃথিবী পর্যন্ত চলে আসতে পারে। নক্ষত্রের এ অবস্থাকে রেড জায়ান্ট বলে।
সূর্য ও রেড জায়ান্ট এর তুলনামূলক আকার!
এ অবস্থায় সূর্যের পৃষ্ঠতাপমাত্রা কয়েক হাজার ডিগ্রি কমে যাবে। এভাবে সূর্য প্রায় আরও ১০০ কোটি বছর কাটাবে। এরপর হিলিয়াম শেষ হয়ে গেলে তখন সূর্য আবার অভিকর্ষের টানে আবার ছোট হয়ে যাবে, তখন এক পর্যায়ে সূর্যের অভিকর্ষ বল তাঁর বাইরের বিশাল আবরণ আর ধরে রাখতে পারবে না। ফলে তা বিশাল গ্যাস ও ধূলিকণার মেঘ রুপে চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে ও কেন্দ্রে পড়ে থাকবে সূর্যের ছোট সাদাটে রঙের উজ্জ্বল কেন্দ্র, যাকে তখন সাদা বামন বা হোয়াইট ডোয়ার্ফ নক্ষত্র বলা হবে! যা আকারে আমাদের পৃথিবীর সমান হবে প্রায়!
সাদা বামন ও সূর্যের তুলনামূলক আকার!
উৎপন্ন হবে গ্রহীয় নেবুলার! সাদা বামন নিজের টানে সংকুচিত হয়ে এত ঘন হয় যে এর প্রতি বর্গ সেন্টিমিটার পদার্থের ভর ১০ কেজি থেকে ১০০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এক পর্যায়ে যখন সাদা বামন আর শক্তি নির্গত করতে পারবে না, তা পরিণত হবে কালো বামনে। যদিও মহাবিশ্বে এখনো কোন কালো বামনের খোঁজ পাওয়া যায়নি, কারণ মহাবিশ্বের বয়স এখনো এতটা বেশি হয়নি!
কাল্পনিক কালো বামন!
সূর্য আরও বড় ও বেশি ভরের কোন নক্ষত্র হলে তা সুপারনোভা হয়ে ভর অনুযায়ী ব্ল্যাক হোল বা নিউট্রন নক্ষত্রে পরিণত হতো।
যাই হোক, সূর্য যেহেতু আমাদের সব শক্তির উৎস, তাই এর আলো ও তাপের অভাবে পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্ব প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে। তবে শুরুতে সূর্য যখন এর রেড জায়ান্ট ধাপে থাকবে তখন বিশাল সূর্যের বিকিরণে আমাদের সমুদ্র শুকিয়ে যাবে এবং পৃথিবী হবে একটি উত্তপ্ত পাথরের টুকরা যার বায়ুমণ্ডল হবে মূলত নাইট্রোজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের আধার। যদিও এসব দেখার মতো কোনো মানুষ থাকবে না সে সময়, এর আগেই তাঁরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বা অন্য কোনো গ্রহের বাসিন্দা হবে। রেড জায়ান্ট এর পর সে যখন সাদা বামনে রুপ নেবে তখন সৌরজগতের গ্রহদের জন্য দরকারি শক্তি এটি আর দিতে পারবে না, তখন পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহগুলো চরম ঠাণ্ডা মৃত গ্রহে পরিণত হবে।