পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় দেখা গিয়েছে করোনার ভ্যাকসিন নেওয়ার পর শরীরের চুম্বকের মত আটকে যাচ্ছে ধাতব পদার্থ। এ যেন এক অবাক করা ঘটনা। এবং এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে গণমাধ্যম সমস্ত জায়গায় রীতিমতো চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রথম ঘটনাটির সূত্রপাত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে শিলিগুড়ির ভরত নগর এলাকায় তারপর। যথাক্রমে বসিরহাট দিনাজপুর বর্ধমান নানান জায়গায় দেখা যায় এই একই ঘটনা। ভরত নগরের উল্লেখিত ব্যক্তি পেশায় গাড়িচালক নেপাল চক্রবর্তী জানান , তিনি নাকি খাবার খাওয়ার সময় হঠাৎ চামচটা গায়ে কোনক্রমে খেয়াল বসে রেখেছিলেন হঠাৎ দেখেন তার গায়ে চামচটা লেগে গিয়েছে আর পড়ছে না। তিনি এটা তারপর সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন এভাবেই ভাইরাল হয়ে যায় ঘটনাটি। শুধু একটি ঘটনা নয় এমন আরো চার-পাঁচটি ঘটনার সূত্রপাত ঘটে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে। দেখা যাচ্ছে ব্লেড ,মোবাইলফন ,চামচ , খুন্তি লাগানো বিভিন্ন ব্যক্তির ছবি। এমনকি স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে ভারতীয় মেডিকেল দপ্তরের শীর্ষ পর্যন্ত এ বিষয়ে বিবৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে যেহেতু বিষয়টি ভ্যাকসিন সম্পর্কিত।
চিকিৎসক ও বিজ্ঞান মঞ্চের বক্তব্যঃ-- দেশে কুড়ি কোটি মানুষ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। কারো দেহে এমন উপসর্গ দেখা দেয় নি। এমন উদ্ভট দাবি নিয়ে তাদের বিস্তর সন্দেহ আছে এবং তারা এক প্রকার এই ঘটনা অবাস্তব অসম্ভব বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তাই স্বঘোষিত ম্যাগনেটম্যানের দাবিকে নস্যাৎ করে কেন্দ্রীয় সরকারের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে —করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে কোন ব্যক্তির শরীরে চুম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি হওয়া অসম্ভব। ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকারের নোডাল এজেন্সি প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো টুইট করে জানিয়েছে ভ্যাকসিন নিয়ে মানব চুম্বক হয়ে উঠেছে বলে যে দাবি নেট মাধ্যমে ছড়িয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। হিসাবে তারা দেখিয়েছেন, ভ্যাকসিন যা দিয়ে তৈরি হচ্ছে তার সঙ্গে চুম্বকের কোন সম্পর্ক নেই। বেশিরভাগ পয়সা লোহা দিয়ে তৈরি হয়। হাতা খুন্তিও বেশিরভাগ অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি,কোনও চুম্বক তা টানবে না। পেসমেকার মেটালিক প্লেট বসানো আছে কিনা বা কোন শারীরিক সমস্যা আছে কিনা তা দেখতে হবে।
বাস্তবে আসল ঘটনা কি? তদন্তে কি উঠে আসলোঃ-- এই উদ্ভট দাবির সত্যতা সম্বন্ধে যাচাইয়ের জন্য ভারতীয় বিজ্ঞান মঞ্চের কয়েকজন সদস্য ও গণমাধ্যমের কয়েকজন বিশিষ্ট সাংবাদিক এই উদ্ভট দাবি করেছিল যারা তাদের বাড়িতে উপস্থিত হন। উপস্থিত হয়ে তারা ওইসব ব্যক্তিদের পুনরায় কার্যক্রমটি করে দেখাতে নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ মতো তারা দেহে ছুরি-কাঁচি মোবাইল থালা ইত্যাদি লাগিয়ে প্রাথমিকভাবে প্রদর্শন করেন আগের মতনই। তাদের কার্যক্রম শেষ হলে বিজ্ঞান মঞ্চের কিছু লোক তাদের গায়ে পাউডার লাগিয়ে দেন। পরবর্তীতে তাদের পুনরায় আগের মত ছুরি-কাঁচি ব্লেড দেহে লাগানোর অনুমতি দেন। পরীক্ষায় শেষে দেখা গেল পূর্বের মত একটিও ধাতব বস্তু আর আকর্ষিত হচ্ছে না দেহে। তাই ঘটনাটিকে বিজ্ঞান মঞ্চের বিশিষ্টরা সম্পূর্ণ ভূল ও ভ্রান্তিকর বলে ঘোষিত করেন। এবং পূর্বের ঘটনাটিকে তারা মানব দেহের স্কিনের আদ্রতা জনিত কারসাজি বলে উল্লেখ করেছেন। এবং জেনে বুঝে ভ্রান্তি ছড়ানোর দায়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।