Photo of Ad1

সূর্যের চেয়েও বড় নক্ষত্র অাছে।

 নিচে নক্ষত্র ও এদের প্রকারভেদ নিয়ে বেশ বিস্তারিত একটা লেখা দিচ্ছি, এখানে বিশাল নক্ষত্রগুলো সূর্যের তুলনায় কতো ভারী ও বিশাল এর উদাহরণও দিয়েছি।

তারা তো তারাই! এর আবার প্রকারভেদ কি? আকাশে দেখার সময় হয়তো একেক তারার রঙ দেখতে একেক রকম লাগে, কিন্তু সবই তো বিশাল জ্বলন্ত গ্যাসের পিণ্ড। ব্যাপারটা ঠিক, কিন্তু এর ও প্রকারভেদ আছে। অনেকে অনেক ভাবে নক্ষত্রের প্রকারভেদ করার তত্ত্ব দিয়েছেন। তবে সবচেয়ে প্রচলিত হচ্ছে বর্ণালী অনুসারে শ্রেণীবিভাগ ও উজ্জ্বলতার ভিত্তিতে শ্রেণীবিভাগ!

নক্ষত্র বা তারাদের বর্ণালী ও তাপমাত্রা অনুযায়ী এদের বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়। সে অনুসারে নক্ষত্রকে প্রধানত সাত ভাগে ভাগ করা হয়। এদেরকে প্রধান ক্রমের নক্ষত্র (Main Sequence Star) বলে। মোট নক্ষত্রের ৯০% ই এরা। এই নক্ষত্রগুলো যত বেশি উজ্জ্বল, তত বেশি উত্তপ্ত হয়ে থাকে।

তাপমাত্রা বেশি থেকে কম অনুযায়ী সাজালে এই সাতটি ধরণকে OBAFGK, ও M এভাবে সাজানো হয়। O এবং B ধরণের নক্ষত্র খুব একটা দেখা যায়না, কিন্তু এরা অনেক উজ্জ্বল হয়ে থাকে আর M ধরণের নক্ষত্র মহাকাশে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এরা সবচেয়ে কম উজ্জ্বল হয়ে থাকে। উজ্জ্বলতার সাথে সাথে এদের বিকিরিত বর্ণালীও আলাদা ধরণের হয় যা উজ্জ্বল নীল থেকে লালচে রঙের হতে পারে। এই রঙ এর কারণ ওই নক্ষত্র দ্বারা শোষিত মৌল, যা এরা জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করে। একেক মৌলের কারণে একেক রঙ দেখা যায়।

বিভিন্ন শ্রেণীর নক্ষত্র

নক্ষত্র জন্মের প্রাথমিক ধাপ আর T-Tauri নক্ষত্রের ব্যাপারে আগেই বলেছিলাম। এরপরের ধাপ ই হচ্ছে নক্ষত্রের জীবনের প্রধান ও স্থিতিশীল ধাপ। এসময় নক্ষত্র ফিউশন (Fusion) প্রক্রিয়ায় হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়ামে রুপান্তরিত হয় আর প্রচুর শক্তি (আলো, তাপ ইত্যাদি) নির্গত করে।

ফিউশন

ফিউশন একটি পারমাণবিক বিক্রিয়া, এর মানে মিলিত হওয়া। একটি মৌলের পরমাণুর কয়েকটি নিউক্লিয়াস মিলিত হয়ে নতুন মৌল উৎপন্ন হওয়ার প্রক্রিয়াকে ফিউশন বলে। নক্ষত্রের প্রচণ্ড অভিকর্ষ বল ও তাপের ফলে এমনটা হয়ে থাকে। এসময় উৎপন্ন মৌলের নিউক্লিয়াসের ভর উপাদানের নিউক্লিয়াসের ভরের সমষ্টির থেকে কম থাকে। যে ভর কমে যায়, সেটিই নক্ষত্রের বিকিরিত শক্তি হিসেবে পাওয়া যায়! এবং এটি স্যার এলবার্ট আইনস্টাইনের E=mc^2 সূত্র মেনে সংঘটিত হয়। উদাহরণ দিতে গেলে, বেশিরভাগ প্রধান ক্রমের নক্ষত্র হাইড্রোজেন কে হিলিয়ামে রুপান্তরিত করে শক্তি উৎপন্ন করে। এসময় চারটি হাইড্রোজেন পরমাণুর নিউক্লিয়াস মিলিত হয়ে একটি হিলিয়াম নিউক্লিয়াস গঠন করে। এক্ষেত্রে আসল ভরের ০.৩% শক্তিতে রুপান্তরিত হয়। আমাদের সূর্যও একটি প্রধান ক্রমের নক্ষত্র!

এ পর্যায়ে থাকা নক্ষত্রগুলোকে স্থিতিশীল বলা হয় কারণ অভিকর্ষের ফলে এদের কেন্দ্রমুখী টান ও ফিউশনের ফলে উৎপন্ন শক্তির কেন্দ্রবিমুখী ধাক্কা এই দুইয়ে মিলে একটি সমতার সৃষ্টি করে, যার ফলে নক্ষত্রটি একটি গোল আকার ধারণ করে। ব্যাপারটা অনেকটা দড়ি টানাটানি খেলার মতো। দুই প্রান্তে যখন সমান শক্তির দুই প্রতিদ্বন্দ্বী থাকে, তখন কিন্তু কেউ কাউকে ছাড় দেয়না। কেউই তাঁর নিজের দিকে টেনে নিতে পারবে না দড়ি। ফলে একটা স্থিতিশীল অবস্থা বজায় থাকবে। একটি মেইন সিকোয়েন্স নক্ষত্র হতে হলে এর সর্বনিম্ন ভর হতে হবে সূর্যের ভরের ০.০৮ গুণ, নইলে এটি ফিউশন প্রক্রিয়া শুরু করতেই পারবে না। আর সর্বোচ্চ আকার বলতে গেলে তা সূর্যের চেয়ে ১০০ গুণ ভারী ও হতে পারে।

তুলনামূলক আকার

O শ্রেণীর নক্ষত্রঃ এই নক্ষত্রগুলোর সংখ্যা মহাকাশে সবচেয়ে কম। মোট মেইন সিকোয়েন্স স্টার এর মাত্র ~০.০০০০৩% হচ্ছে ‘ও’ শ্রেণীর নক্ষত্র। মানে প্রতি ৩০ লক্ষ নক্ষত্রের মধ্যে একটি নক্ষত্র এই শ্রেণীর হতে পারে। এই নক্ষত্রগুলো খুবই উত্তপ্ত ও উজ্জ্বল হয়ে থাকে। এদের পৃষ্ঠতাপমাত্রা অন্তত ২৫ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়। গড়ে এই শ্রেণীর নক্ষত্রের ভর সূর্যের চেয়ে ৬০ গুণ ভারী ও ব্যাসার্ধ ১৫ গুণ বেশি হয়। উজ্জ্বলতার দিক থেকে এই নক্ষত্রগুলো ১৪ লক্ষ গুণ বেশি উজ্জ্বল হয়। এই নক্ষত্রগুলো গাঢ় নীল থেকে নীল বর্ণের হয়ে থাকে। উদাহরণঃ জেটা পাপিস।

জেটা পাপিস

B শ্রেণীর নক্ষত্রঃ এগুলোও মহাকাশে অনেক কম পরিমাণে পাওয়া যায়। মেইন সিকোয়েন্স নক্ষত্রের মাত্র ০.১৩% বা, প্রতি ৮০০টির একটি ‘বি’ শ্রেণীর হয়ে থাকে। এগুলোও অনেক উজ্জ্বল ও উত্তপ্ত হয়ে থাকে, কিন্তু তা ‘ও’ শ্রেণীর নক্ষত্রের তুলনায় কম। এদের পৃষ্ঠতাপমাত্রা ১১ হাজার থেকে ২৫ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে থাকে। এসব নক্ষত্র সূর্য থেকে গড়ে ১৮ গুণ বেশি ভারী ও ব্যাসার্ধে ৭ গুণ বড় হয়। উজ্জ্বলতার তুলনা করলে তা সূর্যের থেকে ২০ হাজার গুণ বেশি উজ্জ্বল। এই নক্ষত্রগুলো নীল থেকে হালকা নীল রঙের হয়। উদাহরণঃ রাইজেল।

রাইজেল

A শ্রেণীর নক্ষত্রঃ ‘এ’ শ্রেণীর নক্ষত্র সাদা থেকে সাদাটে নীল রঙের হয়। মহাবিশ্বের প্রতি ১৬০ নক্ষত্রের একটি এই শ্রেণীর নক্ষত্র হতে পারে। অর্থাৎ এদের পাওয়ার সম্ভাবনা ০.৬%। এদের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা সাড়ে ৭ থেকে ১১ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে। এদের গড় ভর সূর্য থেকে ৩ গুণ বেশি ও ব্যাসার্ধ ২.৫ গুণ বেশি হতে পারে। এগুলোর উজ্জ্বলতা সূর্যের চেয়ে প্রায় ৮০ গুণ বেশি হতে পারে। উদাহরণঃ সিরিয়াস ও ভেগা।

ভেগা

F শ্রেণীর নক্ষত্রঃ এই নক্ষত্রগুলো হলদে সাদা থেকে সাদা বর্ণের হয়। এদের খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা ৩% বা প্রতি ১০০ নক্ষত্রের একটি ‘এফ’ শ্রেণীর নক্ষত্র হতে পারে। এই নক্ষত্রগুলোর পৃষ্ঠতাপমাত্রা ৬ হাজার থেকে সাড়ে ৭ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে। এই নক্ষত্রগুলোর ভর সূর্যের থেকে গড়ে ১.৭ গুণ অবদি হতে পারে এবং ব্যাসার্ধ হতে পারে ১.৩ গুণ বেশি। উজ্জ্বলতার দিক থেকে এরা সূর্যের তুলনায় ৬ গুণ বেশি শক্তিশালী। উদাহরণঃ ক্যানোপাস।

ক্যানোপাস

G শ্রেণীর নক্ষত্রঃ আমাদের সূর্য এই শ্রেণীর নক্ষত্র। এই শ্রেণীতে অবস্থিত সব নক্ষত্রই আকারে, ভরে ও উজ্জ্বলতায় সূর্যের প্রায় সমান হয়। এর বর্ণ হয় হলদে থেকে সাদাটে হলদে। গড় পৃষ্ঠতাপমাত্রা ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস। মহাকাশের ৭.৬% নক্ষত্র ‘জি’ শ্রেণীর। সূর্য ছাড়া আরও একটি উদাহরণঃ ক্যাপেলা।

ক্যাপেলা

K শ্রেণীর নক্ষত্রঃ আকাশের নক্ষত্রের ১২.১% দখল করে আছে ‘কে’ শ্রেণীর প্রধান ক্রমের নক্ষত্র। এরা কমলা থেকে কমা হলুদ রঙের হতে পারে। এদের উজ্জ্বলতা ও উত্তাপ তুলনামূলকভাবে কম। এদের ভর সূর্যের ০.৮% ও ব্যাসার্ধ ০.৯%। উজ্জ্বলতার দিক থেকে এরা সূর্যের প্রায় অর্ধেক। এদের পৃষ্ঠতাপমাত্রা সাড়ে ৩ থেকে ৫ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে। উদাহরণঃ আর্কটারাস।

আর্কটারাস

M শ্রেণীর নক্ষত্রঃ কমলা থেকে লালচে কমলা রঙের এই শ্রেণীর নক্ষত্রে আমাদের মহাকাশ পরিপূর্ণ। মোট নক্ষত্রের প্রায় ৭৬.৪৫% ই এই ‘এম’ শ্রেণীর নক্ষত্র। পৃষ্ঠের তাপমাত্রা সাড়ে ৩ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম ও আকার ও ব্যাসার্ধে সূর্যের তুলনায় ০.৩ গুণ এই নক্ষত্রগুলোর আলোক বিকিরণ খুবই মৃদু। সূর্যের তুলনায় ০.০৪ গুণ! উদাহরণঃ বেটেলজ্যুস।

বেটেলজ্যুস

এছাড়াও উজ্জ্বলতার তীব্রতার ভিত্তিতে যদি ভাগ করা হয় তাহলে রোমান সংখ্যা ব্যবহার করে ৯টি শাখায় নক্ষত্রকে ভাগ করা হয়। 0 (অতি উজ্জ্বল হাইপারজায়ান্ট) Ia (উজ্জ্বল সুপারজায়ান্ট), Ib (স্বল্প উজ্জ্বল সুপারজায়ান্ট), II (উজ্জ্বল জায়ান্ট), III (জায়ান্ট), IV (সাব জায়ান্ট), V (ডোয়ার্ফ বা বামন। এরাই প্রধান শ্রেণীর নক্ষত্র), sd (সাব ডোয়ার্ফ) ও D (সাদা ডোয়ার্ফ)। এছাড়াও বিশেষ কিছু অনিয়মিত লক্ষণ দেখে আরও কিছু উপশ্রেণীতেও ভাগ করা হয়েছে।

হাইপারজায়ান্ট ও সুপারজায়ান্ট সবচেয়ে বড় আকারের নক্ষত্র। এদের ব্যাস আমাদের পুরো সৌরজগতের ব্যাসের চেয়েও বড় হতে পারে। এরা মৃত্যুর পর ব্ল্যাকহোলে পরিণত হয়। জায়ান্ট নক্ষত্র গুলো আরেকটু ছোট, কিন্তু অনেক গুণ বড় অবশ্যই। বামন নক্ষত্রগুলো সূর্যের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বড় ও ২০ হাজার গুণ উজ্জ্বল হয়। আমাদের সূর্য হচ্ছে একটি হলুদ বামন নক্ষত্র। যা বামন নক্ষত্রের চেয়ে ছোট। এর মৃত্যুর সময় এটি রেড জায়ান্টে পরিণত হবে, অর্থাৎ আমাদের সূর্য এর মৃত্যুর সময় আকারে অনেক বড় আর লালচে হয়ে যাবে। আর শেষমেশ হোয়াইট ডোয়ার্ফ বা সাদা বামনে রুপান্তরিত হবে। সূর্যের থেকে একটু বেশি ভরের নক্ষত্রগুলো সুপারনোভা হয়ে নিউট্রন নক্ষত্রে পরিণত হয়।

উৎসঃ নক্ষত্রের প্রকারভেদ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন
Photo of Ad1